ময়মনসিংহ শহরের অতি নিকটেই জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড়ের দক্ষিণে গৌরীপুরের ভাংনামারি ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ বাজার সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্রের দু’টি ধারা দু’দিকে বেশ কিছু দূর গিয়ে আবার একই ধারায় মিলিত হয়েছে। এর মাঝে তৈরি হয়েছে একটি বৃহৎ ব-দ্বীপের।এই দ্বীপটিকে সবাই ময়নার চর(Mayna Dip) বলে ডাকত। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ময়না মিয়া এই এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি এই চরে গরু চরাতেন । নদে মাছ ধরতেন। অবসরে চরের বুনো গাছের তলায় শীতল হতেন। বাঁশির সুরে ঢেউ তুলতেন। সেই সুর শুনে লোকজন ছুটে আসলে সবার মাঝে ব্রিটিশদের তাড়ানোর মন্ত্র দিতেন। এরপর লোকমুখে ধীরে ধীরে এর নাম হয়ে যায় ময়নার চর। আবার এই চরে এক সময় প্রচুর ময়না পাখির বাস ছিল। ছিল পাখিদের অভয়ারণ্য। এখনো এখানে প্রচুর দেশীয় পাখির দেখা পাওয়া যায়।
-
কিভাবে যাবেন
বাস:
ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার মেইল ও লোকাল গাড়িতে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিটে ময়মনসিংহে পৌঁছা যায়। মহাখালী ছাড়াও কমলাপুর, বিআরটিসি টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোনা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে আসা যেতে পারে।
এ পথে সবচেয়ে ভাল পরিবহনের মধ্যে রয়েছে এনা ট্রান্সপোর্ট। এ সেবা পেতে জনপ্রতি গুনতে হবে ২২০ টাকা। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এই পরিবহণ ছেড়ে যায়। সৌখিন পরিবহন-১৫০ টাকা।
ময়মনসিংহ মাসকান্দা বাসস্টান্ড থেকে রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা কিংবা সিএনজিতে যেতে হবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড়। সময় লাগতে পারে ২০-২৫ মিনিট। গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে ময়না দ্বীপ। ভাড়া লাগতে পারে রিকশায় ২৫-৪০ টাকার মতো। অটো রিকশায় ১০-১৫ টাকা প্রতিজন। আর রিজার্ভ নিলে ৬০-১০০ টাকার মতো।
রেল স্টেশন থেকেও দূরত্ব ও ভাড়া প্রায়ই সমান। এ ছাড়া সড়ক পথে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ মোড় গিয়ে হেঁটেই ঘাটে চলে যাওয়া যায়। ঘাটে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিকে তাকালেই চোখে পড়বে গাছ-গাছালি ঘেরা উঁচু টিলা ও জঙ্গলের মতো একটা কিছু। এটাই ময়না দ্বীপ। পানি না থাকলে চার-পাঁচ মিনিট হে্ঁটেই উঠে যাওয়া যাবে দ্বীপে।
ট্রেন: ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস সাতটা বিশ এ ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছাড়ে। এছাড়াও অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস নয়টা চল্লিশ এ ছাড়ে। এগুলো সব আন্তঃনগর ট্রেন। মেইল ট্রেনেও যেতে পারেন। মেইল ট্রেন গুলো হল মহুয়া এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস, বলাকা এক্সপ্রেস ইত্যাদি।
-
কোথায় থাকবেন
এখানে থাকার কোন জায়গা নেই। তবে যদি ময়মনসিংহ শহরে থাকতে চান তাহলে নিম্নের হোটেল গুলোতে থাকতে পারেন-
আমির ইন্টান্যাশনাল
০১৭১১ – ১৬৭ ৯৪৮
হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল
০১৭১৫ – ১৩৩ ৫০৭
হোটেল হেরা
০১৭১১ – ১৬৭ ৮৮০
হোটেল সিলভার ক্যাসেল
০৯১-৬৬১৫০, ০৯১-৬৬১৫১, ০১৭১০ – ৮৫৭ ০৫৪,
হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল
০৯১-৬৫৯৯৫
এছাড়া রয়েছে নিরালা রেস্ট হাউস, হোটেল ঈশা খাঁ, হোটেল উত্তরা, তাজমহল ইত্যাদি।
-
কি খাবেন
দ্বীপে তেমন কোন খাবারের ব্যবস্থা নাই। তাই শহর থেকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া শহরেও খেয়ে নিতে পারেন।প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের খুব নামডাক। আর আছে হোটেল ধানসিঁড়ি ও হোটেল সারিন্দা।এছাড়া
ময়মনসিংহ শহরে যাবেন আর বিখ্যাত মুকুল ভাইয়ের চায়ের দোকান ঢুঁ মারবেন না তা কি করে হয়! মুকুল ভাইয়ের চা, সিঙ্গারা আর পুরি দারুণ মুখরোচক।
-
অব্যশ্যই দেখবেন
আলেকজেন্ডার ক্যাসেল (শহরের ভিতরেই), মুক্তাগাছা রাজবাড়ি (ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা বাস সার্ভিস রয়েছে। চাইলে মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ মোড় থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়েও মুক্তাগাছা যেতে পারেন। মাথা পিছু ভাড়া পড়বে ২০ টাকার মতো), রামগোপাল পুর জমিদার বাড়ি(ময়মনসিংহ কালিবাড়ি রোডে রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি), বোটানিক্যাল গার্ডেন(শহরেই অবস্থিত)।