বাংলাদেশের ভাসমান পেয়ারা বাজার বসে জলের দেশ বরিশাল এর দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ঝালকাঠী ও স্বরূপকাঠীর বিভিন্ন জায়গায় । এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ভিমরুলি, আটঘর, কুড়িয়ানা বাজার। অনেকে এই ভাসমান বাজার সমুহকে থাইল্যান্ড এর ফ্লোটিং মার্কেট এর সাথে তুলনা করে থাকেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার মন পেয়ারা বেচাকিনি হয় এই অঞ্চলে। দূর দুরান্ত থেকে নদীপথে পাইকাররা এসে এখানে পেয়ারা কিনে।
ভিমরুলির পেয়ারা বাজার দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে জুলাই আর অক্টোবরের মধ্যে। বাংলাদেশের উৎপাদিত মোট পেয়ারার প্রায় ৮০ ভাগই উৎপাদিত হয় ঝালকাঠির বিভিন্ন গ্রামে। আটঘর, কুরিয়ানা, ডুমুরিয়া, বেতরা, ডালুহার, সদর ইত্যাদি এলাকার প্রায় ২৪,০০০ একর জমিতে পেযারার চাষ হয়! আর এ পেয়ারা বেঁচা-কেনার জন্য ঝালকাঠির ভিমরুলিতে জমে ওঠে বাংলাদেশের সবচে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার।
এই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য পেয়ারার বাগান। চাষিরা সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা পেরে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। প্রতি বছরের জুলাই, আগষ্ঠ, সেপ্টেম্বর এই মৌসুমে কয়েকশ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন ও কেনাবেচা হয়।ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিনদিক থেকেই এই খালটি খোলা আর প্রশস্ত।
ভিমরুলি গ্রামের আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য পেয়ারা বাগান,ইক্ষু বাগান।পেয়ারা আর ইক্ষুর মৌসুম শেষ হলে আসে আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। আর সবশেষে আসে সুপারি। একটু কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ও ব্যস্ত থাকে এই হাট। ফল ছাড়াও এখানের প্রধান পণ্য বিভিন্ন রকম সবজি।
পর্যটকরা চাইলে ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে পেয়ারা বাগানের ভিতরে ঘুরে বেরাতে পারবেন এবং ইচ্ছামত পেয়ারা খেতে পারবেন।। বাড়িতে নেয়ার জন্যে ফ্লোটিং মার্কেট থেকে পেয়ারা কিনে নিতে পারবেন।
-
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌ পথ দুই ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনের এসি বাসও যায় ঝালকাঠী। ভাড়া ৮শ’ টাকা। এছাড়া, ‘দ্রুতি’, ‘ঈগল’, ‘সুরভী’ ও ‘সাকুরা’ পরিবহনের নন এসি বাসও যায়, ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। বরিশাল এর নতুল্লাবাদ থেকে বাসে অথবা মাহিন্দ্রা করে যেতে হবে বানারিপাড়া। মাহিন্দ্রাতে ভাড়া নিবে ৩৫/৪০ টাকা। তারপর সেখান থেকে নসিমনে ১৫ টাকা অথবা বাইকে ৫০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে যাবেন কুড়িয়ানা। কুড়িয়ানা ব্রীজ পাড় হয়ে আবার অটো করে ৫ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন আটঘর ও কুড়িয়ানা বাজারে।
আর ভিমরুলি যেতে চাইলে বানারিপাড়া থেকে নৌকা বা ট্রলারে যাওয়াই ভালো।
অথবা নৌ পথে ঢাকার সদরঘাট ঠেকে প্রতিদিন পিরোজপুর/বরিশাল এর লঞ্চ ছাড়ে বিকেল ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।ডেকের ভাড়া ২০০/২৫০ টাকা আর কেবিন সিঙ্গেল ৮০০/১০০০ এবং ডাবল ১৫০০/২০০০ টাকা। আপনি পিরোজপুরের লঞ্চে গেলে বানারিপারা টারমিনালে নেমে যেতে হবে, অার বরিশালের লঞ্চে গেলে বরিশাল সদরে নামতে হবে, বরিশাল সদর থেকে বানারিপারা।
বানারিপারা থেকে উপড়ে উল্লেখিত নিয়মে যেতে পারেন অথবা বানারিপারা লঞ্চ ঘাটের অাশপাশ থেকেই ট্রলার রিসারভ করে নিতে পারেন। ভিমরুলি,আটঘর ,কুড়িয়ানা সহ আরো অনেক ছোট বাজার ও বাগান ঘুড়িয়ে আনার জন্য ৫০০-৭০০ টাকা ভাড়া নিবে ছোট ট্রলারে, আর বড় ট্রলার ১২০০-১৫০০ টাকা।
-
কোথায় থাকবেন
আপনি দিনে যেয়ে দিনেও ফিরে আসতে পারেন। আর রাত্রি যাপন করতে চাইলে বরিশাল নতুল্লাবাদ চলে আসতে পারেন। অথবা ঝালকাঠি শহরের দু একটি হোটেল হলো কালিবাড়ি রোডে ‘ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস, বাতাসা পট্টিতে আরাফাত বোর্ডিং, সদর রোডে হালিমা বোর্ডিং ইত্যাদি। ভাড়া ১০০ থেকে ২৫০ টাকা।
-
কি খাবেন
ভিমরুল,আটঘর,কুড়িয়ানা এসব বাজারের পাশেই খাবারের হোটেল আছে মোটামুটি মানের।অথবা জেলা সদরে ফিরে এসেও খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে পারেন।
বরিশালের বিখ্যাত খাবার মধ্যে আছে নাজিমের কাচ্চি বিরিয়ানী, আকাশ রেস্টুরেন্টের কালা ভূনা, হক এর ছানা ও রসগোল্লা, শশীর মিষ্টান্ন এর মিষ্টি, নিতাই এর রসগোল্লা, বলাকার পুরি, লঞ্চ টার্মিনালের কাছে গোশত চটপুটি, বাজার রোডে ভূড়ি ভুনা ইত্যাদি।
-
অব্যশ্যই দেখবেন
বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার বসে বিশাল ধান আর চালের ভাসমান বাজার। ধানের বাজার ছাড়াও আছে ভাসমান সবজি বাজার। নাজির পুর এর বৈঠাকাঠা, উজিরপুর এর হারতা, মাহমুদকাঠি সহ বেশ কটি জায়গায় আছে এ সবজি বাজার।
এছাড়াও পেয়ারা বাগান ভ্রমন শেষে আপনার হাতে সময় থাাকলে চলে যেতে পারেন চাখারে শেরে ই বাংলার বাড়ী ও জাদুঘর, গুঠিয়া মসজিদ,দূর্ঘা সাগর দীঘি এবং সবশেষ বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদী তীরের এিশ গোডাউন নদীর পার কিংবা মুক্তিযোদ্ধা পার্কে